গ্রামীণফোনের গ্রাহক সেবা এখন তলানিতে হরহামেশা কলড্রপ, অভিযোগে ফল মেলে না

গ্রামীণফোনের গ্রাহক সেবা এখন তলানিতে হরহামেশা কলড্রপ, অভিযোগে ফল মেলে না
দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে প্রতিদিনই বাড়ছে কল ড্রপ। অথচ তাদের দাবি কল ড্রপের পরিমাণ আইটিইউ’র নির্ধারিত ৩ শতাংশের কমই আছে। অথচ হরহামেশা কল কেটে যাওয়ায় গ্রাহক চরম বিরক্ত হচ্ছেন। গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তারা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন- এত কল কেটে যাচ্ছে, সেটা কিভাবে ৩ শতাংশের কম হয়? কখনো কখনো টানা ৩ মিনিটই তো কথা বলা যায় না।
 
ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের কল ড্রপের পরিমাণ নির্ধারণ করে গ্রামীণফোনই। অর্থাৎ যিনি অভিযুক্ত, তিনিই বিচারক। ফলে তিনি যা বলছেন, সবাইকে সেটা মেনে নিতে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো তিনি সঠিক বলছেন, না ভুল বলছেন- সেটা পরিমাপের কোনো ব্যবস্থা নেই আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে। বিটিআরসি এগুলো দেখভালের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি আনলেও এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানা গেছে। এ কারণে গ্রাহক ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না।       
 
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তারাও বলেছেন, ‘কলড্রপ পরিমাপ নির্ধারণ করতে কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। সেগুলোর ব্যবহার শুরু হচ্ছে। এখন আর তাদের অপারেটরদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। যন্ত্রপাতির ব্যবহার পুরোপুরি শুরু হলে তখন তাদের ধরতে পারব, কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
 
অনেক গ্রাহক ইত্তেফাকের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘গ্রামীণফোন এখন এতটাই বেপরোয়া যে কল সেন্টারে কোনো গ্রাহক ফোন করলে অভিযোগ ঠিকমতো না শুনেই দায়সারা গোছের সমাধান দিয়ে পার পেতে চায়। সমাধান তো দূরের কথা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, যারা মোবাইলের সিম কিনেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন তারা ইচ্ছে করলেই এই কোম্পানির সিম ফেলে দিতে পারবেন না। একজনের ব্যবহৃত নম্বরটি দিনে দিনে বহু পরিচিত-অপরিচিত মানুষের কাছে চলে যায়। তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ওই নম্বর। তাই গ্রামীণফোনের সেবা যে পর্যায়েই থাকুক না কেন, তাদের নম্বরটি ব্যবহার করতেই হচ্ছে। আর সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেয়া প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের শীর্ষ মহলেও তাদের কদর আছে। এসব কারণে সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ আমলেই নিচ্ছে না শীর্ষ এই মোবাইল অপারেটর।’
 
টেলিযোগাযোগ সেক্টরের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, মোবাইলের টাওয়ার পৃথক কোম্পানির হাতে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অনেক আগেই। সবশেষে এটার অনুমোদনও দিয়েছেন নতুন মন্ত্রী। টাওয়ার যেহেতু নিজেদের হাতে থাকছে না, এই কারণে গ্রামীণফোন টাওয়ারের পেছনে কোনো খরচও ঠিকমতো করছে না। ফলে গ্রাহক সেবাও নেমে গেছে। কল ড্রপের পরিমাণও বেড়ে গেছে। এখানে গ্রামীণফোন বাজেট কমাচ্ছে আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকের।
 
অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কল ড্রপের কারণে শুধু তাদেরকেই দায়ী করা হয়। অথচ এর সঙ্গে আইসিএক্সসহ আরো অনেকের সম্পৃক্ততা আছে। শুধু অপারেটর তার নেটওয়ার্ক ভালো করলেই কল ড্রপ বন্ধ হবে না। সবগুলো ম্যাকানিজম একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এসব ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।
 
তালেবুল ইসলাম নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা গতকাল ইত্তেফাক অফিসে এসে তার গ্রামীণফোন নম্বরে কল ড্রপের হিসাব দিলেন। গতকাল এক দিনে তিনি ১৮টি কল করেছেন। তার মধ্যে ১৩টি কলের সংযোগ একাধিকবার কেটে গেছে। এ নিয়ে খুবই বিরক্ত তিনি। তার দাবি, গ্রামীণফোনের গ্রাহক সেবা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। মোবাইল ফোন থেকে সমানে টাকা কাটা যাচ্ছে। কিন্তু সেবার নামে গ্রাহকের সঙ্গে যা হচ্ছে সেটা ভয়াবহ অন্যায়।
 
এ ব্যাপারে সম্প্রতি গ্রামীণফোনের একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, কল ড্রপের জন্য শুধু অপারেটররাই দায়ী না। আবহাওয়া, আইসিএক্সসহ অনেক কিছুই সম্পৃক্ত। সাবেক টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম অপারেটরদের কল ড্রপে কল ফেরত দিতে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন। দিনে একটির বেশি কল ড্রপ হলে প্রতি কলে এক মিনিট করে ফেরত পাওয়ার কথা গ্রাহকদের। বিটিআরসিকে তিনি এটা মনিটরিং করতেও বলেছিলেন। কিন্তু কেউ এটা মনিটরিং করছে না। ফলে সেই সুযোগটাই নিচ্ছে গ্রামীণফোন।

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.