সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল কি ? সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ইতিহাস !
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল কি ? সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ইতিহাস !
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, পুরকৌশল বা পূর্তকৌশল হলো পেশাদার প্রকৌশল ব্যবস্থার একটি শাখা যেখানে নকশা, নির্মাণ কৌশল, বাস্তবিক বা প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পরিবেশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয় যার মধ্যে সেতু, রাস্তা, পরিখা, বাঁধ, ভবন ইত্যাদি নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর সর্বত্র পুরকৌশলীদের কাজ রয়েছে। সামরিক প্রকৌশল ব্যবস্থার পর পুরকৌশল হলো সবচেয়ে পুরাতন প্রকৌশল ব্যবস্থাএবং তা বেসামরিক ও সামরিক প্রকৌশল ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যকারী বিভাগ।পুরকৌশলকে ঐতিহ্যগতভাবে বেশ কিছু উপ-শাখায় বিভক্ত করা হয়, যেমন স্থাপত্য প্রকৌশল, পরিবেশ প্রকৌশল, ভূ-কারিগরি প্রকৌশল, ভূপ্রকৃতিবিদ্যা, ভূগণিত, নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল, সংগঠন প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল, পরিবহণ প্রকৌশল, পৃথিবী বিজ্ঞান, বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান, আদালত প্রকৌশল, নগর প্রকৌশল, পানি সম্পদ প্রকৌশল, উপকরণ প্রকৌশল, উপকূলবর্তী প্রকৌশল, মহাকাশ প্রকৌশল, পরিমাণ জরিপ,[৪] মাপজোখ, পরিবেশবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, অবকাঠামো প্রকৌশল, বস্তুবিদ্যা, জলবিজ্ঞান, ভূমি জরিপ এবং নির্মাণ প্রকৌশল।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল পেশার ইতিহাসঃ
মানব সভ্যতার শুরু থেকে প্রকৌশল জীবন ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ এবং ২০০০ সালে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা (প্রাচীন ইরাক) থেকে পুরকৌশলের যাত্রা শুরু বলে ধারণা করা হয়, ঠিক যখন থেকে মানুষ তাদের বসবাসের জন্য আবাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সেই সময়ে চাকা এবং পাল আবিষ্কার হবার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব দারুনভাবে বৃদ্ধি পায়।
বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্তও পুরকৌশল এবং স্থাপত্যবিদ্যার মধ্যে কোন সুস্পষ্ট পার্থক্য ছিল না এবং প্রকৌশলী ও স্থপতি শব্দ দ্বারা ভৌগোলিক স্থানভেদে, মূলত একই ব্যক্তিকে বোঝান হত। মিশরের পিরামিডকে (খ্রিস্ট পূর্ব ২৭০০-২৫০০) বিশ্বের ইতিহাসে বড় কাঠামো নির্মাণের প্রথম দৃষ্টান্ত বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য পুরকৌশল নির্মাণকাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কানাত পানি ব্যাবস্থাপনা কৌশল (সবচেয়ে পুরানোটি ৩০০০ বছর পূর্বের ও প্রায় ৭১ কিলোমিটার লম্বা,দ্যা অ্যাপেইন ওয়ে, চীনের গ্রেট ওয়াল ইত্যাদি। রোমানরা, তাদের সাম্রাজ্যজুড়ে নালা পোতাশ্রয়, সেতু বাঁধ, রাস্তাসহ অসংখ্য বেসামরিক স্থাপনা গড়ে তোলে।
১৮শ শতাব্দীতে পুরকৌশল শব্দটিকে সামরিক প্রকৌশলবিদ্যার বিপরীত হিসেবে ব্যবহার করা হত। বিশ্বের প্রথম স্বঘোষিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন জন স্মিয়াথন যিনি এডিস্টোন লাইটহাউস তৈরি করেছিলেন। ১৭৭১ সালে স্মিয়াথন ও তার কয়েকজন সহকর্মী মিলে স্মিয়াথন সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যদিও তাদের কারিগরি বিষয় নিয়ে কিছু বৈঠক হয় তথাপিও এটি একটি সামাজিক সংগঠনের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না।
১৮১৮ সালে লন্ডনে ইন্সিটিউট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৮২০ সালে থমাস টেলফোর্ড এর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি রাজকীয় সনদ গ্রহণ করে যা পুরকৌশলকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নরউইচ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বেসরকারি কলেজ হিসেবে পুরকৌশল পড়ান শুরু করা হয়, ১৮১৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৩৫ সালে রেন্সিলেয়ার পলিটেকনিক ইন্সিটিউট থেকে পুরকৌশলে সর্বপ্রথম ডিগ্রি প্রদান করা শুরু হয়। ১৯০৫ সালে প্রথম নারী হিসেবে পুরকৌশলে সেই ডিগ্রী পান নোরা স্ট্যান্টোন ব্লাচ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশলের ইতিহাস
পুরকৌশল হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন সমাধানের নিমিত্তে প্রাকৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং নীতিগুলোর প্রয়োগ। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রকে অধিকতর বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পুরকৌশল পেশা আজকের অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে। যেহুতু পুরকৌশলের বিস্তৃতি অনেক ব্যপক, এর জ্ঞান কাঠামোবিদ্যা, বস্তুবিদ্যা, ভূবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, মাটি, জলবিজ্ঞান, পরিবেশবিদ্যা, বলবিদ্যা এবং বিজ্ঞানের আর শাখার সাথে সংযুক্ত।
প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগীয় সময়কালে সকল সকল স্থাপত্যের নকশা এবং নির্মাণ রাজমিস্ত্রি এবং কাঠমিস্ত্রি দ্বারা করা হত, যার ফলে একসময় স্থপতির প্রয়োজন অনুভব করায়। সকল জ্ঞান একদল বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে মুষ্ঠিবধ্য ছিল এবং তা খুব কম সময়ই অন্যদের জানানো হত। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একই ধরনের স্থাপনা, রাস্তা ও অবকাঠামো দেখা যেত এবং তা আকারে ক্রমান্বয়ে আর বড় হতে থাকে।
পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতের সূত্রগুলিকে পুরকৌশলের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রথম প্রচেষ্টাটি করেন আর্কিমিডিস তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ সালে, যার মধ্যে আর্কিমিডিসের তত্ত্ব অন্তর্গত ছিল, যা প্লবতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা মজবুত করতে সাহায্য করে এবং আমাদেরকে বিভিন্ন ব্যবহারউপযোগী সমাধান যেমন আর্কিমিডিসের স্ক্রু বানাতে সাহায্য করে। ব্রহ্মগুপ্ত, একজন ভারতীয় গণিতবিদ, সপ্তম খ্রিস্টাব্দে হিন্দু-আরবিক সংখ্যাতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, পাটিগণিত ব্যবহার করে খননকৃত এলাকার আয়তন বের করবার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
তথৎ- উইকিপিডিয়া
কোন মন্তব্য নেই